শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সংক্ষিপ্ত জীবনি : ১৪৮৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ফাল্গুনী দোল পূর্ণিমায় আবির্ভাব ঘটে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর। পিতা পণ্ডিত জগন্নাথ মিশ্র ও মাতা শচীদেবী তখন পশ্চিমবঙ্গ জেলার নবদ্বীপ শহরে বসবাস করছিলেন। তাদের আদিনিবাস বাংলাদেশ। সিলেট জেলার ঢাকা দক্ষিণ গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন জগন্নাথ মিশ্র। বিদ্যার্জনের মনোবাসনায় বাবা উপেন্দ্র মিশ্র জগন্নাথকে নবদ্বীপে পাঠান। ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে ১৭ বছর বয়সে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব জলপথে সিলেটে এসেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল পিতৃপুরুষদের সম্পত্তি উদ্ধার। এখানেও তিনি ভক্তি অনুশীলনে মনোনিবেশ করেন। ১৫০৮ খ্রিস্টাব্দে ২২ বছর বয়সে মহাপ্রভু
বৈষ্ণবভক্ত ঈশ্বরপুরীর কাছে দশাক্ষর গোপালমন্ত্রে দীক্ষা লাভ করেন। তখন থেকে কৃষ্ণপ্রেমে আসক্ত হয়ে ছাত্র- শিষ্যদের স্বরচিত পদাবলি সংকীর্তনের
শিক্ষা দিতে লাগলেন। শ্রীচৈতন্যদেব সংকীর্তন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আধুনিক হিন্দু সমাজে সে সময় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাব বিস্তার ঘটাতে সক্ষম
হন। শ্রীচৈতন্যদেব প্রবর্তিত বৈষ্ণবতত্ত্ব সনাতন হিন্দু ধর্ম মতাবলম্বীর নবসংস্করণ। বৈষ্ণবতত্ত্ব জাতিভেদ প্রথায় নির্যাতিতমানুষের মনে প্রবল আবেগের সঞ্চার করে। জাতিভেদ, শ্রেণীবৈষম্যের শিকার সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সংকীর্তন পরিক্রমণে আকৃষ্ট হয়ে অংশগ্রহণ করতে থাকে। নিত্যানন্দ, হরিদাস, শ্রীরাম, মুকুন্দ দত্ত, অদ্বৈত আচার্যসহ অনেকে শ্রীচৈতন্যদেবেরনবদ্বীপ সংকীর্তন যাত্রায় আত্মনিয়োগ করেন। হরিভক্তি আস্বাদনে মহাপ্রেমিক হতে শ্রীচৈতন্যদেব
অনেককে আহ্বান করেন। সেই আহ্বান দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে। ২৪ বছর বয়সে ১৫১০ সালের ২৬ জানুয়ারি মাঘী শুক্লপক্ষে মহাপ্রভু গৃহত্যাগ করে আচার্য কেশব ভারতীর কাছ থেকে হিন্দুশাস্ত্রীয় সন্ন্যাস দীক্ষা গ্রহণ করেন। তিনিই মহাপ্রভুর নাম রাখেন শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য। মহাপ্রভুর সংক্ষিপ্ত জীবনের বিশ্বরূপ সংসারের শেষ ১৮ বছর পুরীতে বসবাস করে শুদ্ধচিত্তে কৃষ্ণভাবনায় মত্ত থাকেন। ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুন মাত্র ৪৭ বছর বয়সে জগন্নাথদেবের মন্দিরের কপাট বন্ধ করে বিগ্রহের সঙ্গে বিলীন হয়ে চিরতরে অন্তর্নিহিত হন। সনাতন ধর্মের দুর্যোগপূর্ণ সময়ে শ্রীচৈতন্যদেবেরআবির্ভাব ঈশ্বর আরাধনাকে নবরূপে রূপায়ণ করেছে।
বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়ে বৈষ্ণবতত্ত্ব অবলম্বন করে সংকীর্তনের মাধ্যমে ঈশ্বর প্রার্থনার অসাধারণ বৈচিত্র্যকে ‘চৈতন্য যুগ’ হিসেবে পরিগণিত করার
কৃষ্ণভাবনামৃতেরক্ষেত্র তৈরি করেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তিত সংকীর্তন মহাযাত্রা পৃথিবীর প্রতিটি দেশে দেশে নগরে নগরে পরিক্রমণ হতে থাকে। কৃষ্ণভাবনায় অন্তর্মুখী হওয়ার এ আন্দোলন ভারতীয় উপমহাদেশকে প্রবলভাবে প্লাবিত করে। লাখ লাখ মানুষের ধর্মবিশ্বাস, দর্শন, চিন্তাচেতনা ও ধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। বিশ্ব ধর্ম দিবস পালনের উদ্দেশ্য ধর্মীয় চেতনার উন্মেষ ঘটানো। সনাতন সংকীর্তন মহাযাত্রা এখানে শতভাগ সফল ।
(জয় মহাপ্রভু)